বেগুনের বেশি গুণ
বেগুন এখন সারা বছর পাওয়া গেলেও বেগুনকে শীতকালীন সবজি বলা হয়। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের বেগুন পাওয়া যায়। বেগুন ভাজা, বেগুনের ভর্তা , বেগুন পোড়া তো আছেই। এছাড়া নানা সবজিতে ব্যবহার করা হয় বেগুন। সারা বছর পাওয়া যায় এবং দামেও সস্তা। এই সবজির নানা উপকারিতা রয়েছে।
শুধু স্বাদের কারণে নয়, বেগুন শরীরের পুষ্টি পূরণের প্রয়োজনীয় সবজি হিসেবে বিবেচিত। বেগুন খেতে ভালো, অন্যদিকে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজে পূর্ণ। আছে খানিকটা কার্বোহাইড্রেট আর প্রচুর জলীয় অংশ। তাই যারা ওজন কমাতে চায়, তাদের জন্যও বেগুন খুব ভালো সবজি।
তবে যাদের গেঁটে বাত আছে, কিংবা অ্যাজমা ও অ্যালার্জি থাকে, তাদের বেলায় বেগুনে খানিকটা বিধিনিষেধ আছে। বেগুনে বেশি গুণ, সেই গুনগুলো সেটা জেনে নেওয়া যাক।
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উপকারী খাদ্য উপাদান। যেমন
প্রতি ১০০ গ্রাম বেগুনে রয়েছে –
- শক্তি- ২৫ কিলোক্যালরি,
- শর্করা- ৫.৮৮ গ্রাম,
- সুগার- ৩.৫৩ গ্রাম,
- ফাইবার- ৩ গ্রাম,
- চর্বি- ০.১৮ গ্রাম,
- আমিষ- ০.৯৮ গ্রাম,
- থায়ামিন- ০.০৩৯ মিলিগ্রাম, (বি-১)
- রিবোফ্লেভিন- ০.০৩৭ মিলিগ্রাম,
- নিয়াসিন- ০.৬৪৯ মিলিগ্রাম,
- প্যানটোথেনিক অ্যাসিড- ০.২৮১ মিলিগ্রাম,
- ভিটামিন বি৬- ০.০৮৪ মিলিগ্রাম,
- ফোলেট- ২২ আইইউ,
- ভিটামিন সি- ২.২ মিলিগ্রাম,
- ভিটামিন ই- ০.৩ মিলিগ্রাম,
- ভিটামিন কে- ৩.৫ আইইউ,
- ক্যালসিয়াম- ৯ মিলিগ্রাম,
- আয়রন- ০.২৩ মিলিগ্রাম,
- ম্যাগনেসিয়াম- ১৪ মিলিগ্রাম,
- ম্যাংগানিজ- ০.২৩২ মিলিগ্রাম,
- ফসফরাস- ২৪ মিলিগ্রাম,
- পটাশিয়াম- ২২৯ মিলিগ্রাম এবং
- জিংক- ০.১৬ মিলিগ্রাম।
- হাড় শক্ত করে: বেগুনে থাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এই উপাদানগুলো দাঁত, হাড়ের জন্য খুব উপকারী। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম দাঁতের গঠনকে দৃঢ় করে ও মাড়িকে শক্তিশালী করে। হাড়ের গঠন ও বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- চোখের জন্য উপকারি: এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, যা চোখের জন্য খুব উপকারী। এই ডিজিটাল যুগে আমাদের চোখের পরিশ্রম করতে হয় খুব বেশি। এতে চোখের ওপর চাপ পড়ে। বেগুনে ভিটামিন এ থাকায় তা আমাদের চোখ ও ত্বকের জন্য খুবই ভালো। শুধু তাই নয়, ভিটামিন এ ত্বকের জন্য ভালো এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে: বেগুন খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। যাঁদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, তাঁরা কোনো রকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই খেতে পারেন বেগুন। তবে তাঁদের অবশ্যই বেগুন বেক বা গ্রিল করে খেতে হবে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে: বেগুনে ক্যালোরি কাউন্ট অত্যন্ত কম হওয়ায় বেগুন খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। বেগুনে ফাইবার ও জলীয় ভাল অত্যন্ত বেশি থাকায় ওজন কমাতে বেগুন সহায়ক।
- হজম ক্ষমতা বাড়ায়: বেগুনের ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হজম শক্তি বাড়ায় এবং সুগারের শোষণ কমায়, ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। হজম ও ক্ষুধা বাড়ায়।
- ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: বেগুনে কম কার্বোহাইড্রেট এবং বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকায় ডায়াবিটিস কমাতে প্রাচীন কাল থেকেই বেগুনের ব্যবহার চলে আসছে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে: যারা নিয়মিত বেগুন খায়, তাদের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় কম। বেগুনে আছে ক্যানসার প্রতিরোধক উপাদান। পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্রের ক্যানসারকে প্রতিরোধ করার এক অসাধারণ ক্ষমতা আছে বেগুনের।
- শরীরের রক্ত চলাচল ঠিক রাখে: বেগুনে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘ই’ এবং ‘কে’। এটি শরীরের ভেতর রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে রক্ত চলাচল কার্যক্রমকে সচল রাখে।
- ডায়রিয়ার জিঙ্ক ঘাটতি পূরণ করে: ডায়রিয়া হলে শরীরে জিংকের ঘাটতি দেখা দেয়। জিংকের ঘাটতি দূর করার সবচেয়ে ভালো সবজিগুলোর একটি বেগুন। তবে ডায়রিয়া চলাকালীন বেগুন নয়। ডায়রিয়া ভালো হয়ে গেলে বেগুন খেয়ে পূরণ করতে পারেন জিংকের ঘাটতি।
- রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে: বেগুনে থাকে আয়রন। এই আয়রন শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করে। তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীরা খেতে পারে বেগুন। পুষ্টি পূরণ হবে, রক্ত স্বল্পতাও দূর হবে।
- মুখ ও ঠোঁটের ঘা ভাল করে: মুখ ও ঠোঁটের কোণে কিংবা জিবে ঘা হয় অনেকের। এটি সাধারণত রিবোফ্ল্যাবিনের অভাবে হয়ে থাকে। বেগুনে থাকে প্রচুর রিবোফ্ল্যাবিন। নিয়মিত বেগুন খেলে এ সমস্যা এড়ানো যায়।
- খাবারের রুচি বাড়ায়: জ্বর হওয়ার পর মুখের বিস্বাদও দূর করে বেগুন। তাই জ্বরের পর বেগুনের তরকারি খেলে মুখের স্বাদ ফিরে পাওয়া যেতে পারে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: বেগুনে আছে প্রচুর পরিমাণ ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ। এটি খাবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করতে বেগুনের আছে বিশেষ ভূমিকা।
- ঘুম ঠিক করে: যাঁদের ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা আছে, আয়ুর্বেদিক মতে বেগুন খেলে তাঁদের অনেকটাই নিরাময় হবে।
- এন্টিঅক্সিডেন্ট: যে কোনও রঙিন ফল বা সবজির মতো বেগুনেও আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসিয়ানিন। এটি খুব শক্তিশালী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
- বহু ভিটামিন সমৃদ্ধ: বেগুন ভিটামিন এ, সি, ই এবং কে সমৃদ্ধ সবজি। ভিটামিন এ চোখের পুষ্টি জোগায়, চোখের যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ভিটামিন সি ত্বক, চুল, নখকে করে মজবুত। দেহে রক্ত জমাট বাঁধার বিরুদ্ধে কাজ করে ভিটামিন ই ও কে। এই ভিটামিন চারটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে করে বহুগুণে কার্যকর।
বেগুন থেকে যারা সাবধানে থাকবেন
- যাদের বাতের সমস্যা আছে
- যাদের বেগুনে এলার্জি আছে
- যাদের এজমা আছে।
বেগুনের অপকারিতা
- বেগুন ভ্রুনের বিকাশ ব্যাহত করতে পারে, তাই গর্ভবতী মায়ের বেগুন না খাওয়া ভালো।
- পেটের গোলমাল চলাকালীন বেগুন খাবেন না, তাতে গোলমাল বাড়তে পারে। তবে পেট ঠিক হয়ে গেলে অবশ্যই বেগুন খান, এতে জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ হবে।
- যাদের এলার্জি আছে, তারা বেগুন খাবেন না।
- যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তারা বেগুন খাবেন না। বেগুনের অক্সালেট তাদের জন্য ক্ষতিকর।
—